Nov 5, 2022

প্লটুন ব্রিজের নিকুঞ্জ মোহন

বাংলায় গঙ্গা নদীর উপরে ভাসমান প্লটুন ব্রিজ 1874 সালে চালু হয়। মল্লিক ঘাট পাম্পিং স্টেশনের ডায়নামো দিয়ে পন্টন ব্রিজে বিদ্যুতের আলো আসতে তখনো বছর পাঁচ দেরি। হাওড়া ব্রিজে যাতায়াতের জন্য টোল আদায় করতো কলকাতা পোর্ট কমিশনারস।  কলকাতার দিকে ব্রিজের মুখে  টোল অফিস ছিল। ব্রিজ পাহারা ও আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব ছিল ব্রিজ পুলিশের।  সেখানে টোল নিত টোল বাবু নিকুঞ্জ মোহন বসু আর কর্পোরাল ছিলেন মোহাম্মদ আলী। 

এপ্রিল মাসের ১ তারিখ । সময়টা ১৮৭৭। তখন বিকাল ৫টা। হাওড়ায় স্টেশনের মাথায় অস্তগামী সূর্য লাল রং ঢেলে দিচ্ছে। ব্রিজের উপর লোকজন সেরকম নেই। একটু ঢিলে ঢালা ভাব। ঠিক এমন সময় কলকাতার দিক থেকে একটি দ্রুতগামী ডগ কার্ট টোল না দিয়ে এগিয়ে চলল হাওড়ার দিকে। কার্ট এর সামনে সহিস আর পিছনে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক ও ইংরেজ ভদ্রমহিলা  হাসি ঠাট্টায় মত্ত।  নিকুঞ্জ চেচিয়ে উঠলো, কর্পোরাল আলীকে বলল টোল আদায়ের কথা। ব্রিজ পুলিশের কনস্টেবল সেই গাড়ির পেছনে দৌড়তে লাগল, গাড়ি কিন্তু থামল না।  হাসির বেগের সঙ্গে গাড়ির বেগ ও বাড়লো।  কিন্তু কর্পোরাল ও ব্রিজ পুলিশের কনস্টেবল তো ছাড়ার পাত্র নয়, তারাও একটি হ্যাকনি ক্যারেজ ধরে নিয়ে সেই ডগ কার্ট এর পেছনে ধাওয়া করল। ধাওয়া করতে করতে পৌছে গেল   প্রায় দু মাইল দূরের হাওড়া পুলিশ স্টেশনের কাছে । কনস্টেবল ডগ কার্ট টিকে ধরে আটকাল আর কর্পোরাল হাওড়া পুলিশের ইন্সপেক্টর মিস্টার ডবসনের কাছে গেল সাহায্যের জন্য। ইংরেজ ভদ্রলোক তার কেনস্টিক দিয়ে কর্পোরাল আলী কে মারধর করে তাদের গাড়ি ছাড়িয়ে নিলেন।

ভাসমান পল্টন হাওড়া ব্রিজ। ছবি ইন্টারনেট থেকে।

এরপর সেই ইংরেজ ভদ্রলোক তার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার কলকাতার দিকে চললেন। ব্রীজ পুলিশ তখন তার গাড়ির সহিস কে আটক করলো।  ভদ্রলোক প্রচণ্ড খাপ্পা হয়ে উঠলেন, আর  ঘটনাচক্রে সেই সময় ব্রিজের উপর উপস্থিত ব্রিজ পুলিশের সুপারিন্ডেন্ট। ইংরেজ ভদ্রলোক অতিশয় রাগান্বিত হয়ে সুপারিন্ডেন্টএর কাছে গেলেন। তার রাগের কারণ, কেন ব্রিজ পুলিশ তার গাড়ির পেছনে দৌড়েছে এবং তার সহিসকে আটক করেছে। সুপারিন্ডেন্ট তাকে বললেন, পুলিশ টোল আদায় করে না, কিন্তু পুলিশ টোল বারের কাছে থাকে, যাতে কেউ টোল না দিয়ে যেতে পারে সেটা দেখার জন্য। কিন্তু ভদ্রলোক তো শোনবার পাত্র নন। তিনি তার  মহিলা সহযাত্রীকে একটা টিক্কা গাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন। এরপর শাসালেন, জানো আমি কে? আমি বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর  সেক্রেটারির ভাই । আমি এদের চাকরি খাবই। আমি এক্ষুনি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে  দেখা করব এবং এর বিচার নিয়েই আমি ছাড়বো। যাই হোক কর্পোরাল তো সেই ইংরেজ ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে ধারা ৩৫৩ আইপিসি এবং ধারা ২৯, হাওড়া ব্রিজ আইন, ১৮৭১ অনুযায়ী অভিযোগ জানালেন। পরের দিনই হাওড়ায় ম্যাজিস্ট্রেট  এফ এইচ পেলইউ এর কাছে কেসটা উঠলো ।

(এর পরের অংশ পরের পোস্টে)

0 comments: