Rangoon Passenger Shed and Babu Mukhram Kanoria

How Babu Mukhram Kanoria came forward to built 'Rangoon Passenger Shed' for fellow Indian.

প্লটুন ব্রিজের নিকুঞ্জ মোহন

An incident happened on Floating Howrah Bridge on 1877.

Champatala Ghat

Read full story on Champatala Ghat.

Refuge House of Kolkata Port

At the mouth of Sundarban, Kolkata Port established some shelters for Sea wrecked, Known as Refuge House.

'Bandel Survey' : A legacy of Colonial India

WB Survey Institute: legacy of a British colonial survey institute through an unique history.

Nov 5, 2022

প্লটুন ব্রিজের নিকুঞ্জ মোহন

বাংলায় গঙ্গা নদীর উপরে ভাসমান প্লটুন ব্রিজ 1874 সালে চালু হয়। মল্লিক ঘাট পাম্পিং স্টেশনের ডায়নামো দিয়ে পন্টন ব্রিজে বিদ্যুতের আলো আসতে তখনো বছর পাঁচ দেরি। হাওড়া ব্রিজে যাতায়াতের জন্য টোল আদায় করতো কলকাতা পোর্ট কমিশনারস।  কলকাতার দিকে ব্রিজের মুখে  টোল অফিস ছিল। ব্রিজ পাহারা ও আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব ছিল ব্রিজ পুলিশের।  সেখানে টোল নিত টোল বাবু নিকুঞ্জ মোহন বসু আর কর্পোরাল ছিলেন মোহাম্মদ আলী। 

এপ্রিল মাসের ১ তারিখ । সময়টা ১৮৭৭। তখন বিকাল ৫টা। হাওড়ায় স্টেশনের মাথায় অস্তগামী সূর্য লাল রং ঢেলে দিচ্ছে। ব্রিজের উপর লোকজন সেরকম নেই। একটু ঢিলে ঢালা ভাব। ঠিক এমন সময় কলকাতার দিক থেকে একটি দ্রুতগামী ডগ কার্ট টোল না দিয়ে এগিয়ে চলল হাওড়ার দিকে। কার্ট এর সামনে সহিস আর পিছনে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক ও ইংরেজ ভদ্রমহিলা  হাসি ঠাট্টায় মত্ত।  নিকুঞ্জ চেচিয়ে উঠলো, কর্পোরাল আলীকে বলল টোল আদায়ের কথা। ব্রিজ পুলিশের কনস্টেবল সেই গাড়ির পেছনে দৌড়তে লাগল, গাড়ি কিন্তু থামল না।  হাসির বেগের সঙ্গে গাড়ির বেগ ও বাড়লো।  কিন্তু কর্পোরাল ও ব্রিজ পুলিশের কনস্টেবল তো ছাড়ার পাত্র নয়, তারাও একটি হ্যাকনি ক্যারেজ ধরে নিয়ে সেই ডগ কার্ট এর পেছনে ধাওয়া করল। ধাওয়া করতে করতে পৌছে গেল   প্রায় দু মাইল দূরের হাওড়া পুলিশ স্টেশনের কাছে । কনস্টেবল ডগ কার্ট টিকে ধরে আটকাল আর কর্পোরাল হাওড়া পুলিশের ইন্সপেক্টর মিস্টার ডবসনের কাছে গেল সাহায্যের জন্য। ইংরেজ ভদ্রলোক তার কেনস্টিক দিয়ে কর্পোরাল আলী কে মারধর করে তাদের গাড়ি ছাড়িয়ে নিলেন।

ভাসমান পল্টন হাওড়া ব্রিজ। ছবি ইন্টারনেট থেকে।

এরপর সেই ইংরেজ ভদ্রলোক তার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার কলকাতার দিকে চললেন। ব্রীজ পুলিশ তখন তার গাড়ির সহিস কে আটক করলো।  ভদ্রলোক প্রচণ্ড খাপ্পা হয়ে উঠলেন, আর  ঘটনাচক্রে সেই সময় ব্রিজের উপর উপস্থিত ব্রিজ পুলিশের সুপারিন্ডেন্ট। ইংরেজ ভদ্রলোক অতিশয় রাগান্বিত হয়ে সুপারিন্ডেন্টএর কাছে গেলেন। তার রাগের কারণ, কেন ব্রিজ পুলিশ তার গাড়ির পেছনে দৌড়েছে এবং তার সহিসকে আটক করেছে। সুপারিন্ডেন্ট তাকে বললেন, পুলিশ টোল আদায় করে না, কিন্তু পুলিশ টোল বারের কাছে থাকে, যাতে কেউ টোল না দিয়ে যেতে পারে সেটা দেখার জন্য। কিন্তু ভদ্রলোক তো শোনবার পাত্র নন। তিনি তার  মহিলা সহযাত্রীকে একটা টিক্কা গাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন। এরপর শাসালেন, জানো আমি কে? আমি বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর  সেক্রেটারির ভাই । আমি এদের চাকরি খাবই। আমি এক্ষুনি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে  দেখা করব এবং এর বিচার নিয়েই আমি ছাড়বো। যাই হোক কর্পোরাল তো সেই ইংরেজ ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে ধারা ৩৫৩ আইপিসি এবং ধারা ২৯, হাওড়া ব্রিজ আইন, ১৮৭১ অনুযায়ী অভিযোগ জানালেন। পরের দিনই হাওড়ায় ম্যাজিস্ট্রেট  এফ এইচ পেলইউ এর কাছে কেসটা উঠলো ।

(এর পরের অংশ পরের পোস্টে)

Sep 28, 2022

Champatala Ghat

Beyond Rathtala Ghat, a little further north along Stand Bank Road, Champatla Ghat (Lat 22.600326, Long 88.358856) is situated. There are no Champa trees here.  You will see a one-storied ghat pavilion (22 feet by 13 feet) under banyan trees alongwith stone stairs towards the river. Ghat pavilion has three arches in road front and in river side both. One arched window at the north and south side. Except the gate of ghat entrance, the rest of the pavilion is not visible from Stand Bank Road because of a tea shop and a barber shop either side. Stone steps lead straight down to the river. Ghat pavilion of Champatala Ghat is a Grade 1 heritage structure as per Kolkata Municipal Corporation's gradation list.1 The ghat is known for ladies use.

Chapatala Ghat Riverside
Chapatala Ghat Frontside

What naturally comes in our mind that 'Champatala' is under the Champa or Champak tree. Many people say that there was a Champak tree or Champa tree here and hence the name of this Ghat is Champatla Ghat. Mr. Asit Das wrote in ‘Sangbad Pratidin’ magazine 'Robbar' that Champatla Ghat in North Calcutta, or the place called Champatla in Central Calcutta (opposite Medical College), 'Champa' not Champa tree here. The word 'Champa' dialects descended from 'Champ'. 'Champ' means bow. Before the Mughals and the British, the Byadhs and Nishads (primitive race) were in good numbers in ancient Calcutta. The bow and arrow was their weapon of daily use. Champatla Ghat or Champatla region had bow and arrow business. 2


Chapatala Ghat




Manik Bose Ghat/ Dutta Babur Ghat

If we look at the old maps we find that this ghat is not mentioned in Apjon's map of 1794. Chapman and Hall's map published from London in 1842 mentioned this ghat. Upon representation received from the local residents in 1903, the Calcutta Port Commissioner renovated the Champatala Ghat and built a paved staircase and in 1905 its second flight was constructed at a cost of Rs.1124.3 But there was no pavilion as shown in 1842 map; Simms, Frederick Walter’s map of 1857 and Smart map of 1909-10. So the question remains who built this ghat pavilion and when. Moreover the architectural design and style of Champatala Ghat’s pavilion and Manik Bose/ Dutta Babu's ghat pavilion almost same. Champatla Ghat as delineated in the Smart Map of 1909-10 is located a little north of Banmali Sarkar Street crossing. Although there are paved steps up to 70 meters north of the present Champatla Ghat pavilion and  is known as Champatla Ghat.

By 1877, before the riverside land was acquired by the Calcutta Port Commissioners for the construction of Stand Bank Road, private owners of ghats used to levy tolls for loading and unloading of boat traffic. Heavy Boat traffic was   mainly in Chapatala Ghat to Ahiritola Ghat stretch.4

According to Act V of 1870, ‘A. Mackenzie’, Secretary to the Government of Bengal, issued a circular in 1880 of official bathing ghats and landing stages of Calcutta and Howrah. Chapatala Ghat is officially referred here as Bathing Ghat.


Bengali Verson:

রথতলা ঘাট ছাড়িয়ে স্ট্যান্ড ব্যাংক রোড ধরে কিছুটা উত্তরে এগুলেই চাঁপাতলা ঘাট (অঃ ২২.৬০০৩২৬, দ্রাঃ ৮৮.৩৫৮৮৫৬)। কোন চাঁপা গাছ এখানে নেই, বটগাছের তলায় ঘাটের একতলা পাকা মণ্ডপ ( ২২ ফুট বাই ১৩ ফুট )। সামনে ও নদীর দিকে তিনটি আর্চ বিশিষ্ট। উত্তরে এবং দক্ষিণে একটি করে আর্চ বিশিষ্ট জানলা । স্ট্যান্ড  ব্যাংক রোডের দিকে ঘাটের প্রবেশ পথটি ছাড়া মণ্ডপের বাকি অংশটি দেখা যায় না, একদিকে চায়ের দোকান আর একদিকে একটি ক্ষৌর কর্মের দোকান । পাথরের বাঁধানো সিঁড়ি সোজা নদীর দিকে নেমে গেছে । ঘাটের উল্টোদিকে বনমালী সরকার স্ট্রিট আড়াআড়ি ভাবে আধুনা চক্র রেল লাইনে এসে মিশেছে।  কলকাতা কর্পোরেশনের হেরিটেজ স্ট্রাকচারের তালিকা অনুযায়ী চাঁপাতলা ঘাটের মণ্ডপটি গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ স্ট্রাকচার। ঘাটটি মহিলাদিগের স্নান ঘাট হিসাবে পরিচিত। 

চাঁপাতলা বলতে কোন স্বাভাবিকভাবে আমাদের যেটা মনে আসে চাঁপা বা চম্পক গাছের তলা। অনেকে বলেন এখানে একটি চম্পক গাছ বা চাপা গাছ ছিল তার থেকে এই ঘাটের নাম হয়েছে চাঁপাতলা ঘাট। সংবাদ প্রতিদিন ক্রোড়পত্রিকা ‘রোববার’-এ শ্রী অসিত দাস লিখেছেন “উত্তর কলকাতার চাঁপাতলা ঘাটই বলুন, মধ্য কলকাতার চাঁপাতলা নামক জায়গাটির (মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকে) কথাই বলুন, ‘চাঁপা’ কিন্তু এখানে চাঁপাগাছ নয়। ‘চাঁপা’ এসেছে ‘চাঁপ’ শব্দের অপভ্রংশ হিসেবে । ‘চাপ’ মানে ধনুক। প্রাচীন অরণ্যসংকুল কলকাতায় মুঘল ও ব্রিটিশদের আগে ব্যাধ ও নিষাদরা বহাল তবিয়তে ছিল। তিরধনুক ছিল তাদের নিত্যব্যবহার্য অস্ত্র। চাঁপাতলা ঘাট বা চাঁপাতলা অঞ্চলে তিরধনুকের কারবার ছিল। “ 

আমরা যদি পুরনো মানচিত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ‘আপজনের’ ১৭৯৪ সালের মানচিত্রে এই ঘাটের উল্লেখ নেই । ১৮৪২ সালের ‘চাপম্যান ও হলের’ লন্ডন থেকে প্রকাশিত মানচিত্রে এই ঘাটের উল্লেখ পাই। ১০ই জুন ১৯০২ সালে তৎকালীন এক পোর্ট কমিশনার বাবু মুরালি ধর  রয় পোর্ট ভাইস চেয়ারম্যান কে জানান যে রথতলা ও কুমোরটুলি ঘাটের মধ্যবর্তী চাঁপাতলা ঘাটের সংস্কারের জন্য। যেটির অবস্থা খুবই খারাপ। পরে  স্থানীয় অধিবাসীদের প্রস্তাবে ১৯০৩ সালে কলকাতা পোর্ট কমিশনার চাঁপাতলা ঘাটের সংস্কার এবং পাকা সিঁড়ি বানিয়ে দেন এবং 1905 সালে এর দ্বিতীয় ধাপটি বানান ১১২৪ টাকা খরচ করে। কিন্তু এই ঘাটের সঙ্গে কোন মণ্ডপ ১৮৫৭ সালের Simms, Frederick Walter ম্যাপে নেই ও ১৯০৯-১০ সালের স্মার্ট ম্যাপেও নেই। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় ঘাটের মণ্ডপটি কে কবে তৈরি করেছিল। তবে এখানে লক্ষ্য করার মত বিশয় হল চাঁপাতলা ঘাটের মন্ডপ ও মানিক বোস ওরফে দত্ত বাবুর ঘাটের মন্ডপ দুটির গঠনশৈলী ও নকশা প্রায় সমান। ১৯০৯-১০ সালের স্মার্ট ম্যাপে চাঁপাতলা ঘাট বলে যেটি উল্লেখ আছে সেটির অবস্থান বনমালী সরকার স্ট্রিট থেকে কিছুটা উত্তরে। যদিও বর্তমান চাঁপাতলা ঘাটের মণ্ডপটি থেকে প্রায় ৭০ মিটার উত্তর অবধি পাকা সিঁড়ি আছে ও পুরোটাই চাঁপাতলা ঘাট হিসাবে পরিচিত। 

১৮৭৭ সাল নাগাদ কলকাতা পোর্ট কমিশনার স্ট্যান্ড ব্যাংক রোড তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করার আগে গঙ্গার ধারের বাক্তিগত ঘাটগুলিতে নৌকা বাহিত মালপত্র ওঠানো নামানোর জন্য টোল আদায় করত ঘাটের মালিকগন। চাঁপাতলা ঘাট  থেকে আহিরিটোলা ঘাট এই অংশেই নৌকা বাহিত মালপত্র ওঠানো নামানোর কাজ বেশি হত । 

অ্যাক্ট V ১৮৭০ অনুযায়ী তৎকালীন বাংলার প্রাদেশিক সরকার সরকারের সেক্রেটারি ‘এ মাকেঞ্জী’  কলকাতার ও হাওড়ার জনসাধারণের জন্য ব্যবহার্য স্নান ঘাট এবং ল্যান্ডিং স্টেজের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ১৮৮০ সালে । তাতে সরকারিভাবে এই চাঁপাতলা ঘাট কে স্নান ঘাট হিসেবে  উল্লেখ করা হয়। 


Information Source:

1. Gradation list of Heritage Structure from KMC website.

2. অসিত দাস। সংবাদ প্রতিদিন ক্রোড়পত্রিকা রোববার (৩/ডিসেম্বর/২০১৭)। নেমপ্লেট। মুরগিহাটা।

3. Commissioner for the port of Calcutta Resolution Vol 39 Oct 1905- Mar 1906

4. Commissioner for the port of Calcutta Resolution 5th June 1871, 3rd Nov 1902.





Jul 10, 2022

স্বাধীনতার পঁচাত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীজাতির অবদান

 ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন ছিল একটি ধারাবাহিক আন্দোলন যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষের মাটি থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান।এই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত 90 বছর ধরে। অনেক মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং বলিদানের বিনিময়ে ভারতবর্ষ মুক্তি পেয়েছিল পরাধীনতার কবল থেকে। প্রথম প্রথম পুরুষদের মনে নারীদের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। ক্রমে নারীরা প্রমান করে দেন দেশ মাতৃকার মুক্তির আন্দোলনে তাঁরা কোনও অংশে কম নন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ঠিক ততটাই তাদেরও যতটা পুরুষদের। যখন অধিকাংশ ভারতীয় পুরুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে কারাবরণ করেছেন সেই সময় নারীরা সামনে এগিয়ে এসে আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তৎকালীন সমাজে নারীদের কাছে এই স্বাধীনতার লড়াইটা ছিল দ্বিমুখী ও একে অপরের পরিপুরক। একটা ছিল ব্রিটিশ বিরোধী  আন্দোলন ও অন্যটা ছিল তৎকালীন সমাজে নারীদের সামগ্রিক উন্নয়নের লড়াই।

স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নারী চরিত্রের নাম উল্লেখ করতেই হয় তবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে ঝাঁসির মহারানী লক্ষ্মীবাঈের (১৮২৮-১৮৫৮) নাম। যিনি ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন ও যার সাহসিকতার কাহিনি উদাহরণ হয়ে উঠেছিল আপামর জাতীয়তাবাদীদের কাছে। অযোধ্যার নবাব ওয়াজিদ আলির বেগম হযরত মহল (১৮২০-১৮৭৯) ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। অ্যানি বেসন্ট (১৮৪৭-১৯৩৩), সরোজিনী নাইডু (১৮৭৯-১৯৪৯), কস্তুরবা গান্ধী (1869-1944), মাতঙ্গিনী হাজরা (১৮৭০-১৯৪২),অরুনা আসফ আলি (১৯০৯-১৯৯৬) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২) হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের চির উজ্জ্বল নারী চরিত্রদের কয়েকজন।

দেশে দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন অহিংস ও সহিংস ধারায় হয়ে এসেছে । ভারতবর্ষেও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার চার বছর পরে ১৮৮৯ সালের বাৎসরিক সভায় ১০জন নারী যোগদান করেছিলেন। 1890 সালে উপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী ঘোষাল এবং ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে প্রথম বিএ ডিগ্রিধারী ও প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী প্রতিনিধি  হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। এরপর থেকে নারীরা জাতীয় কংগ্রেসের প্রত্যেক সভায় কখনো প্রতিনিধি হিসাবে কখনো পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদান করতে থাকেন।  ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে, বাংলায় স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদনে এবং বিদেশি দ্রব্য বর্জনে তারা প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিংশ শতাব্দীর সূচনার সহিংস বিপ্লবের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যেতে থাকে। প্রথমদিকে ভগিনি নিবেদিতা ও সরলাদেবী চৌধুরী দের মত কয়েকজন বিপ্লবী সংগঠনগুলির সাথে যোগাযোগ রাখলেও সাধারনভাবে মেয়েদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা হত। নারীরা কখনো অস্ত্র লুকিয়ে, কখনো তাদের মা বোন স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করে, কখনো বিপ্লবীদের আড়াল করে, আশ্রয় দিয়ে, কখনো চিঠি পত্রের আদান প্রদান করে, কখনো দেশমাতৃকার কাজে বাড়ির পুরুষদের উৎসাহ দিয়ে বিপ্লবের কাজে সাহায্য করতেন। নারীদের ভুমিকা সেই সময় ব্রিটিশ শাসকদের কাছে কিছুটা অজ্ঞাতই ছিল। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় দুকড়িবালা দেবীর কথা। ১৯১৪ সালের ২৬সে অগাস্ট বিপ্লবীরা কলকাতার রডা কম্পানির জন্য ৫০টি জার্মান পিস্তল ও কার্তুজ লুট করেন। সেই লুট হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেন বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী। এই অপরাধে দুই বছরের জেল হয় তাঁর।

অ্যানি বেসন্ট, সরোজিনী নাইডু ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। অ্যানি বেসন্ট জন্মসুত্রে একজন বিদেশি হয়েও  ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯১৭ সালের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে  তিনিই প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে নারীদের যোগদান ও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত সরোজিনী নাইডু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে সমাজকল্যাণ, নারীমুক্তি ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯২৫ সালের কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন এবং খিলাফত আন্দোলন, সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন যার জন্য তাকে কারাবরন করতে হয়েছিল।

গান্ধীজী স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় মহিলাদের অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন সভা সমিতিতে আহ্বান করতে থাকেন। ১৯১৭ সালে ভারতবর্ষের মাটিতে গান্ধীজীর প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছিল চম্পারন সত্যাগ্রহ সেখানে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবী মধ্যে ১২ জনই ছিলেন মহিলা। সত্যাগ্রহ আন্দোলন নারীদের আকর্ষিত করেছিল ধর্ম বর্ণ সামাজিক অসাম্যতা এবং অবিচার এর বিরুদ্ধে লড়াইের জন্য।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে স্বরাজ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।  ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে রাওলাট অ্যাক্ট পাশ করে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখানো বন্ধ করে দেয়। তার বিরুদ্ধে ৬-ই এপ্রিল গোটা ভারতবর্ষে সাধারন ধর্মঘট ডাকা হয়। সেই দিন গান্ধীজী সমস্ত জাতি ধর্ম  বর্ণ নির্বিশেষে মহিলাদের আহ্বান করেন রাওলাট অ্যাক্ট সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য। তার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী কে অমৃতসরে একটা বদ্ধ জায়গার ভেতর পুরুষ নারী শিশু নির্বিশেষে সবাইকে গুলি করে মারা হয়। কিন্তু ততক্ষণে এটা প্রমান হয়ে গিয়েছিল যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। গান্ধীজীর ডাকে ১৯২০ সালের ১লা আগস্ট যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় তখন নারীরা স্বদেশী আন্দোলন আরো বেশি করে যোগদান করেন। ১৯২১ সালের ৬-ই এপ্রিল থেকে ১৩ -ই এপ্রিল সত্যাগ্রহ সপ্তাহে সরোজিনী নাইডু ডাকে একটি স্বাধীন নিজস্ব মহিলাদের রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি হয় তার নাম ছিল ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ’। এর প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই নভেম্বরে প্রায় এক হাজার মহিলা বোম্বেতে প্রিন্স অব ওয়েলস এর ভারতে ভ্রমণ এর বিরোধিতা করেন বিক্ষোভ দেখান।

এইসময় চিত্তরঞ্জন দাস কলকাতার রাস্তায় খদ্দর বিক্রি করার সময় তাঁর পুত্র সমেত গ্রেপ্তার হন। তখন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী তার বোন উর্মিলা দেবী এবং তার ভাইজি সুনীতি দেবী এগিয়ে আসেন ও কলকাতার রাস্তায় খদ্দর বিক্রি করার সময় তাঁরাও গ্রেপ্তার হন। যখন এই গ্রেপ্তারের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পরে তখন এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রচুর সংখ্যায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হন। তাদের অনুভব ছিল যেন তাদের বাড়ির মেয়েদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাঙালি মেয়েদের এই সাহসিকতার উদাহরণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আস্তে আস্তে সারাদেশের মেয়েরা আরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসতে থাকেন।

মহিলারা এরপর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করতে শুরু করেন। বোম্বে এবং কলকাতায় মহিলারা নুন বিক্রি করতে থাকেন, খাদি কাপড় বিক্রি করতে করতে থাকেন,বিদেশী কাপড়ের দোকান ঘেরাও করতে থাকেন এবং রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাজধানীর রাস্তা তখন হয়ে যায় বিপ্লবী আন্দোলনের কেন্দ্র এবং মহিলাদের কলেজ হয়ে যায় নতুন মেম্বারদের যোগদান কেন্দ্র । গ্রামে গ্রামে মহিলারা খদ্দর কাপড় পড়তে থাকেন এবং বিপ্লবী আন্দোলন কে রৃদ্ধ করতে থাকেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সহযোগী লিলা নাগ (১৯০০-১৯৭০), ১৯২৩ সালে ঢাকায় গড়ে তুললেন ‘দিপালি সঙ্ঘ’ যেখানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। প্রীতিলতা এখান থেকে বেশ কয়েকবার প্রশিক্ষণ নেন।

1928 সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ডাকে অক্সফোর্ড শিক্ষিতা বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের ভাইজি, শিক্ষিকা লতিকা ঘোষ মহিলাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে মহিলাদের যোগদান সুনিশ্চিত করার জন্য গড়ে তুললেন ‘মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ’। মহিলাদের যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি লিখলেন, মহিলারা হচ্ছেন শক্তি এবং মা দুর্গার রূপ। মা দুর্গা যেমন এসেছিলেন শক্তিরূপে এবং অসুরের বিনাশ করেছিলেন তেমনি ভাবে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উদাহরণ দিলেন সেই রাজপুত নারীদের কথা যারা তাদের প্রথমে তাদের স্বামী পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতেন তারপরে নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন। তিনি বললেন এগিয়ে এসো, আমাদের প্রত্যেককে প্রস্তুত হতে হবে, আমাদের নিজেদের  ছোট ছোট স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে দেশমাতৃকার উজ্জ্বল সোনার ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে।

১৯২৯  সালে উর্মিলা দেবী, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী, শান্তি দাস এনাদের নেতৃত্বে কলকাতায় গড়ে উঠলো ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’। এনাদের গ্রুপে ছিল সমাজের উচ্চবর্ণের অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন  খদ্দর শাড়ি পরিহিত  মহিলা যারা যেকোনো সময় অবস্থান বিক্ষোভ এবং কারাবরণ করার ঝুঁকি নিতেন।

মহিলারা এরপর প্রত্যক্ষ বিপ্লবী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে থাকলেন। তাঁরা লাঠিখেলা, ছোরা, তরোয়াল, বন্দুক চালনায় প্রশিক্ষণ নিতে ও অন্যান্য দের দিতে থাকলেন। 1929 সালে কমলা দাশগুপ্ত বাড়ির অনুমতি না পেয়ে গান্ধী আশ্রমে যোগদান করতে না পেরে যোগাযোগ করেন যুগান্তর দলের  সদস্য বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের সঙ্গে এবং শেষপর্যন্ত যুগান্তরে যোগদান করেন। এই সময় বিপ্লবী সংস্থাগুলোতে যারা যোগদান করছিলেন তারা প্রায় সবাই কলেজ ছাত্রী ছিলেন  এবং কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করার পরই এই ধরনের গুপ্ত বিপ্লবী সংস্থাগুলোতে মহিলারা যোগদান করতে আসছিলেন। বীণা দাস (১৯১১-১৯৮৬) সঙ্গে তার বড় বোন কল্যাণী, সুরমা মিত্র, কমলা দাশগুপ্ত সেই সময়ে গড়ে তুললেন মহিলা ছাত্রীদের  একটি  রাজনৈতিক সংস্থা ‘ছাত্রী সংঘ’। কলকাতার বেথুন কলেজে পরার সময় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও সহপাঠী কল্পনা দত্ত ‘ছাত্রী সংঘ’এর সদস্য হন ও হরতাল বিক্ষোভ ইত্যাদি ব্রিটিশ বিরোধী কাজকর্মে অংশ নিতে থাকেন। ক্রমে তাঁরা দুজনেই মাস্টারদার ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্য হন।

১৯৩০ সালে কংগ্রেসের  ডাকে  আইন অমান্য আন্দোলন সুরু হয়। এতে বরিসালের প্রায় সকল নেতাই গ্রেপ্তার হন। এগিয়ে আসেন বরিসালের জমিদার বাড়ির বউ মনোরমা বসু। ৩-রা ফেব্রুয়ারী বরিসালের হরতালে নেতৃত্ব দেবার কারনে তিনি গ্রেপ্তার হন।

১৯৩১ সালের ১৪-ই ডিসেম্বর বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ শান্তি ঘোষ (১৯১৭-১৯৮৮) এবং সুনীতি চৌধুরী (১৯১৬-১৯৮৯) নামে দু'জন কুমিল্লার স্কুলছাত্রী ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ড  স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করলেন। নাবালিকা হিসাবে গন্য করে তাদের ১০ বছরের জেল হয়। পরের বছর ৬ ই ফেব্রুয়ারিতে বীনা দাশ বাংলার গভর্নর স্টানলি জ্যাকসনকে কে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পাঁচটি গুলি করেন। স্টানলি জ্যাকসন বেঁচে যান। বীনা দাশের ৯ বছর জেল হয়। বীনা দাশকে বন্দুকটি সরবরাহ কমলা দাশগুপ্ত। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাঞ্জাবি পুরুষের বেশে  ১৫  জন পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। এই  ক্লাবে বোর্ড লাগানো থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয় দের প্রবেশ নিষিদ্ধ’। রাত ১০.৪৫ নাগাদ বিপ্লবীরা সেই ক্লাবে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করেন। ১০ থেকে ১২ জন মানুষকে আহত করেন। গুলিতে আহত প্রীতিলতা পুলিশের হাতে ধরা না দেওয়ায় বিষ পান করে মৃত্যু বরণ করেন। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই কল্পনা দত্ত গ্রেপ্তার হন।

১৯৩৩ সাল নাগাদ সমস্ত বিপ্লবী মহিলারাই কারাবরণ করেছিলেন। এই সময়ে প্রত্যন্ত জেলাগুলো যেমন মেদিনীপুর, 24 পরগনা, খুলনা, বেকারগঞ্জ, নোয়াখালি , চট্টগ্রাম  থেকে মহিলারা এগিয়ে আসেন লবণ আইন ভঙ্গে। জ্যোতির্ময় গাঙ্গুলী তমলুকের কাছে নরঘাট গ্রামে গিয়ে প্রায় ১০০০ মহিলা ও পুরুষকে একত্রিত করেন গান্ধীজীর ডাকে অহিংস আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য। সুতো বোনা, খাদি তৈরি ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে খাদি আন্দোলনের সঙ্গে মহিলারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।কিন্তু লবণ সত্যাগ্রহ হলো প্রথম এই ধরনের আন্দোলন যেখানে ভারতীয় মহিলারা প্রচুর সংখ্যায় নেমে এসেছিলেন এবং কারাবরণ করেছিলেন। উচ্চশ্রেণীর, সাধারণ গ্রাম্য, শহুরে, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সমস্ত ধরনের মহিলা একসঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন এবং একসঙ্গে কারাবরণ করেছিলেন ।

অরুনা আসফ আলি লবন সত্যাগ্রহতে অংশগ্রহণ করেন। তাকে ভবঘুরে আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিরা ১৯৩১ সালের গান্ধি-আরঅইন চুক্তি অনুযায়ী ছাড়া পেলেও তিনি ছাড়া না পাওয়ায় অন্যান্য মহিলা বন্দিরা জেল ছাড়তে অস্বীকার করেন।

১৯৪২ সালের ৮-ই অগাস্ট ভারত ছাড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। আন্দোলনকে শুরুর আগেই দমন করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সমস্ত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলে, ৯-ই অগাস্ট গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে পতাকা তুলে আন্দোলনের সূচনা করেন অরুনা আসফ আলি।

১৯৪৩ সালে নেতাজি আজাদ হিন্দ বাহিনীতে গড়ে তুললেন একটি নারী বিভাগ তার নাম ছিল ‘ঝাঁসির রানী বাহিনি’। এই বাহিনির সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫০০। বাহিনির দায়িত্বে ছিলেন মাদ্রাজের মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পাস করা ডাক্তার লক্ষ্মী স্বামিনাথন। এই বাহিনির বীরত্বগাথ  আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।

ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পায় ১৫ই অগাস্ট ১৯৪৭ সালে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে নারীদের অবদান ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে। প্রধান কয়েকটি চরিত্রের আড়ালে কত মহীয়সীর নিজ নিজ আত্মবলিদান কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এই সল্প পরিসরে ইতিহাস কতটুকুই বা স্মরণ করা গেল যদিও নারীদের অবদানের ইতিহাস সুধুমাত্র কিছু নাম আর তাদের স্মৃতি ফিরিয়ে দেয় না, দেয় অর্জিত সম্মান আর দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে  সম্মুখ পানে চলার  পথনির্দেশ।


(লেখাটি ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভে ইন্সিটিউট এর পুনর্মিলন স্মরণিকা ২০২১ তে প্রকাশিত।)