১
১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদোল্লার আক্রমনের ফলে ওল্ড ফোট পতনের পর রবার্ট
ক্লাইভ তার পদাতিক সৈন্য বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন কলকাতা পুনরুদ্ধার করতে । এদিকে ওয়াটসন ও অন্যান্য সেনাপতি দের নেতৃত্বে নৌবাহিনী সাথে সাথে চলছে কলকাতার উদ্দেশে । ১৭৫৬
সালের ২৮সে ডিসেম্বর তাঁরা এসে একসাথে মিলিত হলেন
বজবজ এর ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ময়াপুরে । সেখানেই ঠিক হল কলকাতা আক্রমনের
ব্লুপ্রিন্ট। কালে কালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে তুলল তাঁদের সাম্রাজ্য ।
কোলকাতা বন্দরের বিবর্তন পরিবর্ধন হল কোম্পানির
হাতে । জীবন , সম্পত্তি ও নিরাপদ বন্দর এর
জন্য তাঁরা ময়াপুরে গড়ে তুললেন একটি বারুদঘর । তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২০০ বছরেরও আগে
থেকে এর ব্যবহার শুরু হয় ।
ময়াপুর জায়গাটা বজবজের দক্ষিণে , বর্তমান বজবজ বিরলাপুর জূট মিল এর খুব
কাছেই । কলকাতা থেকে দূরত্ব বড়জোর ৩০ কিমি.র আশেপাশে । হুগলী নদী বাঁধের ঠিক পাশেই
ময়াপুর ম্যাগাজিন এর প্রধান গুদামঘর ।গঙ্গার ধারে বিশাল একটি ফাঁকা জায়গা । এর পরিধি প্রায় ২৩ একর জুড়ে বিস্তিত । খুব পুরানো একসঙ্গে লাগোয়া দুটি চারচৌকো গুদামঘর
। এটিকে ঘিরে চারচৌকো দ্বিস্তর সীমানা প্রাচীর । চারটি কোনে চারটি চৌকি ঘর । এর পশ্চিমে নদীর ধারে প্রায় ১৩৭
গজ দূরে ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট ক্র্যাকর
গুদামঘর । এখন আর এটি অবশিষ্ট নেই । ম্যাগাজিন এর উত্তরে ছিল ম্যাগাজিন কীপার
এর দুতলা বাসস্থান । ছাদ হীন অবস্থায় এটি
আজও বর্তমান । এর পূর্বে ছিল গার্ড এর বাসস্থান। বাকিটা ফাঁকা জায়গা । চারপাশে
বিশাল বিশাল গাছ । আর এই পুরো বাবস্থাটি
ছিল নদী বাঁধ দিয়ে ঘেরা । যাতে নদীর জল কোনও ভাবেই ম্যাগাজিনে প্রবেশ করতে না
পারে । ভাঙ্গাচোমা গুদামঘর, ঘর বাড়ি কালের গর্ভে আস্তে আস্তে বিলীয়মান। কখনো কখনো সেই
পুরানো বারুদঘর এর সামনে দাঁড়িয়ে অনুভব
করতে চেয়েছি সেই কর্মব্যস্ত দিন গুলো কে ।
নাহ বারুদ এর গন্ধ পাইনি , কিন্তু এক সুদীর্ঘ ইতিহাস যেন শোনাতে চায় কালের কণ্ঠে ঘটে যাওয়া কিছু অবশেষ ।
সেই সময় যে সমস্থ জাহাজ কলকাতা
বন্দরে আসত তাঁরা সিগনাল ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজনে জাহাজে বারুদ রাখত ।১৮৫৫ সালের আগে অবধি তাঁরা
১০০ পাউন্ড মানে প্রায় ৪৫ কিলো বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় তাঁরা প্রবেশ করতে
পারত । পরে ১৮৫৫ সালের Act XXII অনুযায়ী ৫০ পাউন্ড বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় প্রবেশের অনুমতি পায় । এর অতিরিক্ত
বারুদ, গুলি তাঁদের রেখে আস্তে হত ময়াপুর ম্যাগাজিনে । ফিরে যাবার পথে আবার তাঁরা নিয়ে নিত জমা
রাখা বারুদ । একই ব্যাবস্থা ছিলও দেশী বিদেশী বারুদ আমদানিকারী
দের জন্য। জীবন , সম্পত্তি ও নিরাপদ বন্দর
এর জন্যই এই ব্যাবস্থা ।
১৮৭১ সাল এর সেপ্টেম্বর মাস । সবে ময়াপুর ম্যাগাজিন কলকাতা পোর্ট কমিশনার এর হাতে
এসেছে । তৎকালীন বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর
সেক্রেটারি C. Bernard জানান, লেফটেনান্ট
গভর্নর ময়াপুর ম্যাগাজিন এর
পরিবর্তন পরিমার্জন এর নির্দেশ দিয়েছেন । এবং এও জানান হয় যে বারুদ আমদানি কারীদের অতিরিক্ত বারুদ ময়াপুর
ম্যাগাজিনে জমা রাখতে হবে ও তার জন্য ভাড়া নেওয়া হবে । জমা থাকা বারুদ তিন বছরের বেশি দাবীহীন অবস্থায় থাকলে তা নিলাম করে দেয়া হবে । যারা
বারুদ আমদানি করবেন ও ম্যাগাজিনে বারুদ জমা
রাখবেন তাঁদের ২৫ পাউন্ড অবধি ১ আনা, ২৫ পাউন্ড থেকে ৫০ পাউন্ড অবধি ২ আনা ও ৫০ পাউন্ড
এর বেশি হলে ৪ আনা ভাড়া দিতে হবে । যদিও এর আগে ডেলিভারি চার্জ ছাড়া কোন ভাড়া
নেওয়া হত না।
১৮৭২ সাল । কলকাতা পোর্ট কমিশনার
এর আনুষ্ঠানিক সূচনার সবে দুই এক বছর হয়েছে । ঐ বছর
লেডি মেলভিল নামক একটি জাহাজ কলকাতা বন্দরে আগুনে পুরে যায় । অনুসন্ধান
করলে দেখা যায় ওতে ৫০ পাউন্ড
বারুদ মজুদ ছিল। তাতে জাহাজ টিতে বিস্ফোরণ
ঘটতে পারত ফলে জীবন ও সম্পত্তির হানি ঘটতে পারত । সেই ঘটনার পর, ঐ সালেই নতুন নিয়ম হয়, ৫
পাউন্ড এর বেশি বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না । ফলে
অতিরিক্ত বারুদ তাদের ময়াপুর ম্যাগাজিন এ জমা রাখতে হবে । বন্দরে আগত জাহাজ থেকে
বারুদ ম্যাগাজিন এ নিয়ে আসা ও দিয়ে আসার
সুবিধার জন্য পোর্ট কমিশনার একটি বিশেষ ভাবে নির্মিত বারুদ বোট এর বাবস্থা করেন ।
এই বাবস্থাটি ছিল নিশুল্ক ।
এদিকে ভাড়ার প্রবর্তন ও তিন বছরের সময় সীমার নতুন নিয়মে ভারতীয় বারুদ
আমদানিকারী রা খুব অসুবিধার মধ্যে পরেন । ১৮৭৩ সালে চন্দ্র কুমার মল্লিক এবং
অন্যান্যরা পোর্ট কমিশনার এর কাছে একটি
আবেদন জমা দেন । তাতে তাঁরা বলেন যেহেতু আমদানি করা বারুদ নিজেদের গুদামঘর এ রাখতে দেওয়া হয় না, নির্দিষ্ট
পরিমাণ বারুদ তাঁরা নিয়ে আসতে পারেন, বাকি বারুদ তাদের ময়াপুর ম্যাগাজিন এ রেখে
আসতে হয়, তাই ময়াপুর ম্যাগাজিন ব্যবহার
এর জন্য ভাড়া নেওয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা
আপত্তি যানাচ্ছেন । আবার তাঁরা অনেক সময় বিশেষ ধরনের বারুদ আমদানি করেন যেটা
ম্যাগাজিন এ অনেক সময় ৭ বছরের এর বেশি সময় ধরে পরে থাকে । এর পর পোর্ট কমিশনার ভাড়ার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখলেও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ৩ বছরের সময়সীমা বাড়াতে সম্মত হন ।
( চলবে )
Moyapur Magazine on Google Map.
Inflrmation Sources :
O’Malley, L.S.S. - Bengal District Gazetteers: 24-Parganas (Bengal Secretariat Book Depot, 1914)
Documents of KoPT.
Achipur Barood Ghar
Forgotten History: The Gunpowder Magazine of Achipur
0 comments:
Post a Comment