Jun 15, 2018

Moyapur Magazine ময়াপুর বারুদ ঘর




১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদোল্লার আক্রমনের ফলে ওল্ড ফোট পতনের  পর  রবার্ট ক্লাইভ তার পদাতিক সৈন্য বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন কলকাতা পুনরুদ্ধার করতে  । এদিকে ওয়াটসন ও  অন্যান্য  সেনাপতি দের নেতৃত্বে  নৌবাহিনী সাথে সাথে চলছে কলকাতার উদ্দেশে । ১৭৫৬ সালের ২৮সে ডিসেম্বর তাঁরা এসে একসাথে মিলিত হলেন  বজবজ এর ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ময়াপুরে । সেখানেই ঠিক হল কলকাতা আক্রমনের ব্লুপ্রিন্ট। কালে কালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে তুলল তাঁদের সাম্রাজ্য । কোলকাতা বন্দরের বিবর্তন পরিবর্ধন হল  কোম্পানির হাতে ।  জীবন , সম্পত্তি ও নিরাপদ বন্দর এর জন্য তাঁরা ময়াপুরে গড়ে তুললেন একটি বারুদঘর । তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২০০  বছরেরও আগে থেকে এর ব্যবহার শুরু হয় ।  


ময়াপুর জায়গাটা বজবজের  দক্ষিণে , বর্তমান বজবজ বিরলাপুর জূট মিল এর খুব কাছেই । কলকাতা থেকে দূরত্ব বড়জোর ৩০ কিমি.র আশেপাশে । হুগলী নদী বাঁধের ঠিক পাশেই ময়াপুর ম্যাগাজিন এর প্রধান গুদামঘর ।গঙ্গার ধারে বিশাল একটি ফাঁকা জায়গা ।  এর পরিধি প্রায় ২৩ একর জুড়ে বিস্তিত ।  খুব পুরানো একসঙ্গে লাগোয়া দুটি চারচৌকো গুদামঘর । এটিকে ঘিরে চারচৌকো দ্বিস্তর সীমানা প্রাচীর । চারটি কোনে চারটি চৌকি ঘর । এর পশ্চিমে নদীর ধারে প্রায় ১৩৭ গজ দূরে ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট  ক্র্যাকর গুদামঘর । এখন আর এটি অবশিষ্ট নেই । ম্যাগাজিন এর উত্তরে ছিল ম্যাগাজিন কীপার এর  দুতলা বাসস্থান । ছাদ হীন অবস্থায় এটি আজও বর্তমান । এর পূর্বে ছিল গার্ড এর বাসস্থান। বাকিটা ফাঁকা জায়গা । চারপাশে বিশাল বিশাল গাছ ।  আর এই পুরো বাবস্থাটি ছিল নদী বাঁধ দিয়ে ঘেরা । যাতে নদীর জল কোনও ভাবেই ম্যাগাজিনে প্রবেশ করতে না পারে । ভাঙ্গাচোমা গুদামঘর, ঘর বাড়ি কালের গর্ভে আস্তে আস্তে বিলীয়মান। কখনো কখনো সেই পুরানো বারুদঘর এর সামনে  দাঁড়িয়ে অনুভব করতে চেয়েছি সেই কর্মব্যস্ত  দিন গুলো কে । নাহ বারুদ এর গন্ধ পাইনি , কিন্তু এক সুদীর্ঘ ইতিহাস যেন  শোনাতে চায়  কালের কণ্ঠে ঘটে যাওয়া কিছু অবশেষ । 


ময়াপুর ম্যাগাজিনের মানচিত্র
সেই সময় যে সমস্থ জাহাজ কলকাতা বন্দরে আসত তাঁরা সিগনাল ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজনে  জাহাজে বারুদ রাখত ।১৮৫৫ সালের আগে অবধি তাঁরা ১০০ পাউন্ড মানে প্রায় ৪৫ কিলো বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় তাঁরা প্রবেশ করতে পারত পরে ১৮৫৫ সালের Act XXII অনুযায়ী ৫০ পাউন্ড বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় প্রবেশের অনুমতি পায় । এর অতিরিক্ত বারুদ, গুলি তাঁদের রেখে আস্তে হত ময়াপুর ম্যাগাজিনে । ফিরে যাবার পথে আবার তাঁরা নিয়ে নিত  জমা রাখা বারুদ । একই ব্যাবস্থা ছিলও দেশী বিদেশী বারুদ আমদানিকারী দের জন্য।  জীবন , সম্পত্তি ও নিরাপদ বন্দর এর জন্যই এই ব্যাবস্থা ।


১৮৭১ সাল এর সেপ্টেম্বর মাস সবে ময়াপুর ম্যাগাজিন কলকাতা পোর্ট কমিশনার এর হাতে এসেছে ।  তৎকালীন বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর সেক্রেটারি C. Bernard জানান,  লেফটেনান্ট  গভর্নর  ময়াপুর ম্যাগাজিন এর পরিবর্তন  পরিমার্জন  এর নির্দেশ দিয়েছেন । এবং এও জানান হয় যে  বারুদ আমদানি কারীদের অতিরিক্ত বারুদ ময়াপুর ম্যাগাজিনে জমা রাখতে হবে ও তার জন্য ভাড়া নেওয়া  হবে । জমা থাকা বারুদ তিন বছরের বেশি দাবীহীন  অবস্থায় থাকলে তা নিলাম করে দেয়া হবে । যারা বারুদ আমদানি করবেন ও ম্যাগাজিনে বারুদ  জমা রাখবেন তাঁদের ২৫ পাউন্ড অবধি ১ আনা, ২৫ পাউন্ড থেকে ৫০ পাউন্ড অবধি ২ আনা ও ৫০ পাউন্ড এর বেশি হলে ৪ আনা ভাড়া দিতে হবে । যদিও এর আগে ডেলিভারি চার্জ ছাড়া কোন ভাড়া নেওয়া হত না।

১৮৭২ সাল । কলকাতা পোর্ট কমিশনার এর আনুষ্ঠানিক সূচনার  সবে  দুই এক বছর  হয়েছে । ঐ বছর  লেডি মেলভিল নামক একটি জাহাজ কলকাতা বন্দরে আগুনে পুরে যায় । অনুসন্ধান করলে দেখা যায়  ওতে  ৫০ পাউন্ড  বারুদ মজুদ  ছিল। তাতে জাহাজ  টিতে বিস্ফোরণ  ঘটতে  পারত ফলে  জীবন ও সম্পত্তির হানি ঘটতে  পারত । সেই ঘটনার পর, ঐ সালেই নতুন নিয়ম হয়, ৫ পাউন্ড এর বেশি বারুদ নিয়ে কলকাতা বন্দর এলাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না । ফলে অতিরিক্ত বারুদ তাদের ময়াপুর ম্যাগাজিন এ জমা রাখতে হবে । বন্দরে আগত জাহাজ থেকে বারুদ ম্যাগাজিন এ  নিয়ে আসা ও দিয়ে আসার সুবিধার জন্য পোর্ট কমিশনার একটি বিশেষ ভাবে নির্মিত বারুদ বোট এর বাবস্থা করেন । এই বাবস্থাটি ছিল নিশুল্ক ।


 এদিকে ভাড়ার প্রবর্তন ও  তিন বছরের সময় সীমার নতুন নিয়মে ভারতীয় বারুদ আমদানিকারী রা খুব অসুবিধার মধ্যে পরেন । ১৮৭৩ সালে চন্দ্র কুমার মল্লিক এবং অন্যান্যরা পোর্ট কমিশনার এর কাছে একটি  আবেদন জমা দেন । তাতে তাঁরা বলেন যেহেতু আমদানি করা বারুদ  নিজেদের গুদামঘর এ রাখতে দেওয়া হয় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ বারুদ তাঁরা নিয়ে আসতে পারেন, বাকি বারুদ তাদের ময়াপুর ম্যাগাজিন এ রেখে আসতে হয়, তাই ময়াপুর ম্যাগাজিন  ব্যবহার এর  জন্য ভাড়া নেওয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা আপত্তি যানাচ্ছেন । আবার তাঁরা অনেক সময় বিশেষ ধরনের বারুদ আমদানি করেন যেটা ম্যাগাজিন এ অনেক সময় ৭ বছরের এর বেশি সময় ধরে পরে থাকে । এর পর  পোর্ট কমিশনার ভাড়ার   সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখলেও বিশেষ বিশেষ  পরিস্থিতিতে  ৩ বছরের সময়সীমা  বাড়াতে সম্মত হন ।  

( চলবে )

Moyapur Magazine on Google Map.
Inflrmation Sources : 
O’Malley, L.S.S. - Bengal District Gazetteers: 24-Parganas (Bengal Secretariat Book Depot, 1914)
Documents of KoPT.

More Stories on Moyapur Semaphore :
Achipur Barood Ghar
Forgotten History: The Gunpowder Magazine of Achipur

0 comments: